জাতীয়

ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি

Published

on

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারতের দু’টি কোম্পানি থেকে ১৫ বছরের জন্য ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) । এ জন্য সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুত বিভাগ এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, ভারতের খোলাবাজার থেকে বিদ্যু আমদানির প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরে চলছে। কয়েক বছর আগে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নানা কারণে তা বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এখন বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিদ্যুত বিভাগের মাধ্যমে পাঠিয়েছে পিডিবি। অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে।

বিদ্যুত বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, স্বল্পমেয়াদি ক্রয়চুক্তির অধীনে ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুত আমদানি করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মেয়াদ হবে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৩৩ সালের ১ জুন পর্যন্ত।

পিডিবি সূত্র জানায়, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুত্ কেনার দরপ্রস্তাব আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের চারটি কোম্পানি দরপ্রস্তাব দেয়। এগুলো হলো- এনটিপিসি বিদ্যুত্ ভেপার নিগাম লিমিটেড, সেম্বকর্প গেয়াটরি পাওয়ার লিমিটেড, পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। দরপ্রস্তাবকারীদের মধ্যে এনটিপিসি বিদ্যুত্ ভেপার নিগাম লিমিটেড এবং পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে মূল্যায়ন কমিটি। স্বল্প মেয়াদে এনটিপিসি ভেপার নিগাম লিমিটেড ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করবে। এর দাম পড়বে বাংলাদেশি টাকায় প্রতি ইউনিট চার টাকা ৭২ পয়সা। সঞ্চালন মাশুল হিসেবে খরচ পড়বে প্রতি ইউনিট ৭৯ পয়সা। স্বল্পমেয়াদি বাকি ২০০ মেগাওয়াট সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড। তাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে চার টাকা ৮৬ পয়সা। সঞ্চালন মাশুল প্রতি ইউনিটে পড়বে ৫৪ পয়সা। দীর্ঘমেয়াদে এনটিপিসি থেকে কেনা বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৪৯ পয়সা। সঞ্চালন মাশুল ৭৯ পয়সা। পিটিসি থেকে আমদানিতব্য বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৫৫ পয়সা। সঞ্চালন মাসুল প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ২০ পয়সা।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। এনটিপিসির মাধ্যমে এখন মোট ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কিনছে বাংলাদেশ। চলতি বছরেই ভারতের সরকারি ও খোলাবাজার থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরুর কথা রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে ভারতের বেসরকারি বিদ্যুত উত্পাদকরা। এনটিপিসির বিদ্যুত বিক্রি বা রপ্তানি নিয়ে আপত্তি তুলেছে দেশটির বিদ্যুত খাতের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ভারতের অভ্যন্তরীণ কয়লা ব্যবহার করে উত্পাদিত বিদ্যুত বিদেশে তথা বাংলাদেশে রপ্তানির নিয়ম নেই বলে তারা দাবি করে। গত মার্চেই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশটির বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে ভারতের বেসরকারি খাতের বিদ্যুত প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব পাওয়ার প্রডিউসারস (এপিপি)।

তবে বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতে বিদ্যুত উত্পাদনে কয়লার ব্যবহার নিয়ে এনটিপিসির সঙ্গে সে দেশের বেসরকারি বিদ্যুত উত্পাদকদের বিরোধের আগেও ঘটেছে। এনটিপিসির সঙ্গে চারটি বেসরকারি কোম্পানিও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানিতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পিডিবি এনটিপিসির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সেজন্যও বিরোধ তৈরি হতে পারে। তবে এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশ ভারতের সরকারি ও বেসরকারি দুই খাত থেকেই বিদ্যুত আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ভারসাম্য থাকবে এবং কোনো সমস্যা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version