বিনোদন

মাদকের খপ্পরে পরেই সর্বশান্ত পরীমনি

Published

on

বিডিপি বিনোদন:
বিনোদনজগতের উঠতি মডেল ও নায়িকাদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ ও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন কিছু ব্যবসায়ী, প্রযোজক, নৃত্য পরিচালক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি। তাঁরা সুন্দরীদের মাদক, পর্নোগ্রাফিসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দামি গাড়ি, বাড়িসহ বিলাসী জীবনের ফাঁদে ফেলেন। বিনোদনজগতে পা রাখার দুই বছরের মধ্যেই এমন সিন্ডিকেটে জড়িয়ে ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন হালের জনপ্রিয় নায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি।

জনপ্রিয় নায়িকার আড়ালে চক্রের সঙ্গে মিশে কাটাচ্ছিলেন বেপরোয়া জীবন। অনৈতিক কারবারের চক্রে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মৌ আক্তারসহ প্রায় ৩০ জন মডেল-চিত্রনায়িকা সক্রিয়ভাবে জড়িয়েছেন। তাঁরা অন্তত ১০০ মডেল-চিত্রনায়িকাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছেন। গত বুধবার পরীমনির সঙ্গে ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেপ্তার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ একটি চক্রের অন্যতম হোতা। এর আগে বোট ক্লাবে পরিমনির সঙ্গে থাকা তুহিন সিদ্দিক অমি, মঙ্গলবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানসহ অন্তত এক ডজন পুরুষ ও নারী আছেন, যাঁরা পেশার আড়ালে অনৈতিক কাজে জড়িত। র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দারা তাঁদের ব্যাপারে তথ্য যাচাই ও নজরদারি করে দেখছেন। নাম আসা মডেল-চিত্রনায়িকাদের ব্যাপারেও যাচাই চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফ্ল্যাটে পার্টির নামে বিত্তবান পরিবারের প্রতিষ্ঠিত যুবকদের ডেকে মদপান করিয়ে বা অনৈতিক কাজের সময় আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে এসব চক্র। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে টাকাসহ বিভিন্ন দামি ‘উপহার’ আদায় করে নেয়। সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমন ফাঁদে পড়েন বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য যায়। যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, বেপরোয়া জীবন যাপন করা সুন্দরী নারীদের নিয়ে হাইসোসাইটিতে অনৈতিক কারবার চলছে। এতে অনেকের ভাবমূর্তিও সংকটে পড়েছে। মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এ ধরনের অপকর্মে বিব্রত। এসব কারণে পিয়াসা ও মৌকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে অভিযান। এর সূত্র ধরে মিশু হাসানকে গ্রেপ্তার করা হলে রাজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সিন্ডিকেট এবং পরীমনি জড়িত থাকার তথ্য পান র‌্যাবের গোয়েন্দারা। বোট ক্লাবকাণ্ডে পরীমনির সঙ্গে থাকা বন্ধু পরিচয় দেওয়া অমিও একই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাজ, অমিসহ কয়েকজনের কথায় পরীমনি কাজ করেছেন বলে জানায় সূত্র। তাঁদের মধ্যে একজন বিনোদন সাংবাদিকও রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অবৈধ মাদক উদ্ধারের ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পর্নোগ্রাফিসহ প্রতারণার মামলা হতে পারে বলে জানায় তদন্তকারী সূত্র।

গত বুধবার অভিযানের সময় পরীমনির ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম ওরফে দীপুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাতে বনানীর বাসা থেকে রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার রাজের ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরীমনির বাসায় একটি মিনিবার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশি মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত মদের বোতল, ইয়াবা ও সিসাসামগ্রী, এলএসডি, আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়। বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-১-এর পক্ষ থেকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরীমনি ও দীপুর বিরুদ্ধে একটি এবং রাজ ও সবুজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে বিকেলেই র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমনি পিরোজপুরের একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় ঢাকায় এসে সিনেমায় নাম লেখান। ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ৩০টি সিনেমা এবং পাঁচ থেকে সাতটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর মিডিয়াজগতে আসার পেছনে ছিলেন রাজ। ২০১৬ সাল থেকেই পরীমনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তিনি বাসায় একটি মিনিবার স্থাপন করেন। মিনিবার থাকায় তাঁর বাসায় পার্টির আয়োজন করা হতো। সেই পার্টিতে বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করতেন রাজ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব পরিচালক বলেন, ‘পরীমনির একটি মাদকের লাইসেন্স আছে, তবে সেটির মেয়াদ নেই। আর লাইসেন্স থাকলেও বাসায় এভাবে বার স্থাপন অবৈধ। প্রাথমিকভাবে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগে মামলা করছি।’ এ র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাস নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি করার পাশাপাশি শোবিজজগতে কাজ শুরু করেন। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সিনেমা বা নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে তাঁর একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ২০১৮ সালে। ব্যবসাজগৎ ও চিত্রজগতের দুই ক্ষেত্রে তাঁর সংযোগ থাকায় তিনি টাকার লোভে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের পরিচালক বলেন, রাজের অফিসের কম্পিউটারে আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব ভিডিও রেখেছেন এবং অন্যকে দিয়েছেন। তাঁর নামে পর্নোগ্রাফি আইনেও মামলা হতে পারে। এদিকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ী হোতা মিশু ও জিসানকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদের আদালত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের মাদক কারবার ও পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। পিয়াসার সব অপকর্মের নেতা ছিলেন মিশু। গাড়ি ব্যবসার আড়ালে পিয়াসা, মৌসহ বেশ কয়েকজন মডেলকে দিয়ে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলতেন মিশু হাসান।

ডিবির সূত্র জানায়, এই চক্রের হাতে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাঁরা তদবির বাণিজ্যও করতেন। এদিকে গত ৯ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে নায়িকা পরীমনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা অমির ব্যাপারে এরইমধ্যে অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। অমিকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি ও সিআইডি তদন্ত করে তথ্য পেয়েছে দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে শত শত মানুষকে পাচার করেছেন অমি। নাচের দলের অনুষ্ঠানের নামেও তিনি নারীদের পাচার করেন। এভাবে তিনি ও তাঁর চক্রের সহযোগীরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অমির সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য-প্রমাণও আছে তদন্তকারীদের হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version