Highlights

শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে শিক্ষিকা স্ত্রীর অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

Published

on

চীফ রিপোর্টার
রংপুরে এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষিকা স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন ও চাপ দিয়ে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর বাড়ি থেকে মারধর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের আশায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেছেন নির্যাতিতা স্ত্রী। কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও স্বামী কামাল হোসেন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আদুরী বেগম।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তম স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন কচুয়া বাবুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আদুরী বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষিকা জানান, দুই বছর তিন মাস চার দিন আগে ইসলামী শরিয়ত সম্মতভাবে তারা দুজন পারিবারিক বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। বিয়ের পর আদুরী তার বাবার বাড়ি থেতে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র নিয়ে যান স্বামীর গৃহে। এর কয়েক মাস পর স্বামী ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী মিলে যৌতুকের চাপ দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্বামী কামাল হোসেনের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আদুরী বেগম গঙ্গাচড়া সোনালী ব্যাংক হতে তিন লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সেই টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে মোটা অংকের টাকা এনে দেয়ার জন্য তাকে মারধর করতে থাকে। কিন্তু সন্তান সম্ভাবনা হওয়ায় আদুরী নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর সংসারে থাকার চেষ্টা করেন। এমতাবস্থায় ২০১৮ সালের ২০ মে পুনরায় যৌতুকের পাঁচ লক্ষ টাকার জন্য তাকে কিল ঘুষিসহ মারধর করা হয়। এতে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় প্রতিবেশীরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পিত্রালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরের দিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় শ্বশুড়ালয়ে শারীরিক নির্যাতনে আদুরীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
এঘটনার পর থেকে পারিবারিকভাবে আপোষ মীমাংসার জন্য পরিবার থেকে চেষ্টা করা হয় বলে দাবি করেন আদুরী বেগম। তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতে ফেরার পর স্বামীর সাথে যোগাযোগ রাখেন তিনি। বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করতে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীসহ স্বামীকে বাসায় দাওয়াত করলে তারা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন। এসব ঘটনায় গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সংসার থেকে বিতাড়িতের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর উভয় পক্ষকে সংসারের বিষয়টি চিন্তা করে পারিবারিকভাবে সমঝোতা করার জন্য আদালত থেকে বলা হয়। কিন্তু কামাল হোসেন আদালতের নির্দেশ আমান্য করে উল্টো মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে আদুরী ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
যৌতুক লোভী স্বামী কামাল হোসেনের শাস্তিসহ হাতিয়ে নেয়া কয়েক লক্ষাধিক টাকা ও আসবাবপত্র ফিরে পেতে আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে স্কুল শিক্ষিকা আদুরী বেগম বলেন, নির্যাতন সহ্য করে সংসার করতে আমার অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা আমাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি যৌতুকের জন্য একের পর এক মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ অভিযোগের ব্যাপারে আদুরীর স্বামী প্রভাষক কামাল হোসেন বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি নাটক সাজিয়ে আদালতে মামলা দেয়া হয়েছে। এখন মামলা চলমান রয়েছে। একারণে এবিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না।
অন্যদিকে গঙ্গাগড়া উপজেলার ৩নং বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফজালুল হক রাজু জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আদালত থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয়দের পাশাপাশি ঘটনার স্বাক্ষী ও উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলে প্রাথমিক তদন্তে শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী আদুরীর বেগমের আনীত অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। যা পরবর্তীতে আদালতকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে অবগত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version