শেরপুর গাড়ো পাহাড়ে বাঘের উপস্থিতি
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরের জেলার শ্রীবর্দী ও ঝিনাইগাতি উপজেলার গারো পাহাড়ে হাতি, বানর, অজগড়ের পর এবার বাঘের আনাগোনা দেখতে পেয়েছে বনকর্মী ও সীমান্তের গ্রামের মানুষ। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছে সীমান্তের পাচ গ্রামের মানুষ। গত এক সপ্তাহে ওই গ্রামগুলোতে ১০টি ছাগল খেয়েছে বাঘ। আহত করেছে ১টি ভেড়া, ১টি গরু। ফলে ওইসব গ্রামের মানুষ এখন বাঘ আতংকে রয়েছে। বাঘগুলো দেখতে শেয়ালি রঙের লম্বা প্রায় ৪ ফিট ও উচ্চতা প্রায় ৩ ফিট।
বন বিভাগ এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালায়ে কেরাকেল প্রজাতির এ বাঘ দেখা পাওয়া যায়। এ বনে শুধু এ বাঘই নয় লেপাট প্রজাতির বাঘের আগমন ঘটেছে বালিজুড়ি বনাঞ্চলে । ২০১৬ সালে জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় একটি লেপাট বাঘ লোকালয়ে আসেল ওইসময় স্থানীয় মেয়রসহ ১০জন কে আহত করে বাঘটি। সম্প্রতি এই বনে প্রকাশ্যেই দিনের বেলাতেই বনে বাদরে ঘোরাফেরা করছে এবং বিভিন্ন বাড়িতে হামলা দিয়ে ছাগল ও ভেড়া নি য়ে চম্পট দিচ্ছে। পরবর্তিতে গভীর জঙ্গলে ওই ছাগল ও ভেড়ার নাড়ী-ভুড়ি পড়ে থাকতে দেখছে গ্রামবাসী।
হঠাৎ করে এ পাহাড়ে বাঘের আগমনের বিষয়ে স্থানীয়া ও বন বিভাগ বলছে, উজার হওয়া বন ভূমি প্রাকৃতিক ভাবে গভীর বনায়ন হওয়ায় ভারতের মেঘালয় থেকে এ গারো পাহাড়ে হয়তো বাঘের আগমন হয়েছে। পরবর্তিতে বাঘ গ্রমের বাড়িগুলোর গৃহপালিত গবাদি পশুর উপর হামলা চালাচ্ছে। শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে স্বাধিনতা উত্তর এক সময় গভীর জঙ্গল থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মীর কবলে পড়ে স্বাধিনতা পরবর্তিতে ৯০ দশকের দিকে উজার হয়ে যায় এই গাড়ো পাহাড়। পরবর্তিতে সরকার বন ভুমি রক্ষায় বেশ কিছু উজার বন বনায়ন করেন এবং বেশ কিছু এলাকা প্রাকৃতিক ভাবেই গভীয় জঙ্গলে পরিনত হয়। ফলে ভারত থেকে বন্য হাতি এসে আবাস স্থল গড়ে তুলে সীমান্তের গ্রামগুলোর ফসল ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হতা-হত করে। ফলে সীমান্তবাসী দীর্ঘদিন থেকেই হাতির আতংকে রয়েছে।
সম্প্রতি এক সপ্তাহ ধরে জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকূড়া, পশ্চিম বাকাকূড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি ও ছোট গজনি গ্রামের আলমের ১টি ছাগল, টান্ডু পাগলার ১টি ছাগল, হামিদুর রহমানের একটি ছাগল সহ মোট ১০টি ছাগল সাবাড় করেছে এই নতুন অতিথি বাঘ। পর্যটন কেন্দ্র অবকাশের আশে পাশেও এই বাঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ওই সব গ্রামের বনের ভিতর এবং বনের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার রাস্তার উপর ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ছাগল-ভেড়ার ঘাড়ে কাঁমড়ে ধরে চম্পট দিচ্ছে। এসব ঘটনা বেশীর ভাগই প্রকাশ্যে দিনের বেলা এবং ছাগল-ভেড়ার মালিকদের সামনেই ঘটছে। আবার অনেক সময় থাবা মেরে ছাগল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাগলে মালিক এবং গ্রামবাসীরা হৈচৈ শুরু করে বাঘকে লাঠিসোটা ও দা নিয়ে ধাওয়া করলে আহত ছাগল ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয় বাঘ।এই বাঘের আক্রমনের ভয়ে গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিশুরাও স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। তার এখন দলবদ্ধ ভাবেই জঙ্গল এড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে।বন বিভাগের বন প্রহরি এবং অটোচালক ও স্থানীয় গ্রামবাসী যারা বনের ভিতর ও চলাচল করে তাদের বেশীর ভাগই এ বাঘের সম্মুখিন হচ্ছে। তাবে তারা বাঘের আক্রমনের শিকার হয়নি। কিন্তু বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে এখন তারা চলাচল করছে।
বাকাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল জানায়, পাহাড়ে আমার নিজস্ব জায়গায় আমি ২ একর ধান আবাদ করেছি। গতকাল সকালে ক্ষেত দেখতে গিয়ে শিয়ালি রঙঘের বিশাল এক বাঘ দেখতে পাই। বাঘ আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো যেন আমাকে শিকার করবে।
উত্তর বাকাকুড়া গ্রামের বাসিন্ধা হামিদুর রহমান জানায়, আমার বাড়ির সামনে থেকে বাঘ আমার একটি ছাগলের মাথায় কামড় দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো ছাগলের চিৎকার শুনে গ্রামের কয়েকজন মিলে বাঘটিকে তাড়া করলে সে ছাগল ফেলে চলে যায়। এখন ছাগলটির চিকিৎসা চলছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েজের শেরপুর জেলা সভাপতি কবি রফিক মজিদ বলেন, বনের পৃর্বের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গাড়ো পাহাড়ে প্রাকৃতিক বনায়ন হচ্ছে। এক সময়ের ন্যাড়া পাহাড় এখন গভীর জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। এই বনে এক সময় বাঘ,হরিণসহ প্রায় সব ধরনের পশু পাখি ছিলো। কিন্তু ৯০ দশকের দিকে বন দশ্যু এবং এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তাদের কারনে বন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। এখন যেহেতু এই গাড়ো পাহাড়ে বাঘের আগমন ঘটেছে সেটা নি:সন্দেহে একটা ভালো খবর।
বন ও বনের আশপাশে বাঘের আক্রমণের বিষয়ে রাংটিয়া ও গজনী বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ জানায়, সম্প্রতি গারো পাহাড়ে গভীর জঙ্গল বা বনায়ন হওয়ায় হাতির মতো বাঘেরও আগমন ঘটেছে। তবে আমরা গ্রামবাসীদের সতর্কতার সাথে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছি।
শেরপুর জেলা সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ দেশ রুপান্তরকে বলেন, বাঘ আসার খবরটি আমি পেয়েছি। এখন যেহেতু গভীর জঙ্গল হয়েছে তাই বাঘ আসাটা অস্বাভাবিক নয়। এটা কি জাতের বাঘ সেটা আমরা চিহিৃত করার চেষ্টা করছি।খারাপ লোক