লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এখানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে সব সুযোগ-সুবিধাই আছে। রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে একটি আধুনিক সুবিধাসম্বলিত হাসপাতালও। কিন্তু ওই এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগ দীর্ঘ ০৭ বছর ধরেও চালু করা সম্ভব হয়নি।
২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সফরে এসে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগ উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। ফলে ওই সময় চিকিৎসা সেবা নিয়ে এলাকার লোকজনের মনে আশাও জেগেছিল। কিন্তু মাত্র ৩ মাস চালু থাকার পর সেই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার জন্য পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।
১৯৯৬ সালে দহগ্রামের বঙ্গেরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ১০ শয্যার সরকারি হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ৪জন চিকিৎসক, ৪জন সেবিকাসহ মোট ২৫ লোকবল নিয়োগ দেয়া হয় । কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে, ঠিক ততই যেন হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসক, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন ওয়ার্ড বয়, একজন বাবুর্চি ও একজন সুইপারসহ ০৭ জন কর্মী রয়েছে। বাকি ১৮টি পদ শুন্যই রয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ফার্মেসী বিভাগ খোলা থাকলেও সেখানকার কর্তব্যরত ফার্মাসিস্ট ফিরসাদ হোসেনকে ১১.৩০ মি: পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে ফার্মেসী বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় কুক আঃ জব্বার ও ওয়ার্ড বয় মিজানুর রহমানকে।
অপর দিকে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জিল্লুর রহমান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই প্রায় সপ্তাহ জুড়েই অনুপস্থিত ।
দহগ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল আলম মিলন (৩২) জানান, জিল্লুর রহমান মাঝে মধ্যই এখানে আসেন, আসার পরে তিনি অফিস সময়ে একটি কোয়াটারে বসে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখেন। ৫’শত টাকার নিচে তিনি কোন ভিজিটেই নেন না। স্থানীয় আমিনা বেগম (২০) আরও জানান, জিল্লুর রহমান আগে এখানকার কোয়াটারে ছিলেন, তার স্ত্রী পাটগ্রামে চাকুরী করার কারনে তিনি এখন পাটগ্রামেই থাকেন এবং মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে আসেন।
এব্যাপারে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জিল্লুর রহমান সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্পুর্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, হাসপাতালটির অন্তঃ বিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালু না থাকায় অবহেলিত এ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে ভূগছেন। হাসপাতালে ডাক্তার ও জনবল সংকটও রয়েছে। সরকারের কাছে জোর দাবি অবহেলিত এই এলাকার মানুষজনের স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালটিতে যেন দ্রæত আন্ত:বিভাগ ও জরুরী বিভাগ চালুর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাশেম আলী জানান, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার দায়িত্বরত দুই জন চিকিৎসক ট্রেনিংয়ে রয়েছে।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জিল্লুর রহমানের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং তাকে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।