আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল: ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল জগদল সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা বসেছে। বাঙালীর প্রাণের উৎসব নব বর্ষের আনন্দটায় যেন এপার-ওপার বাংলার হাজারো বাঙ্গালীকে একত্রিত করেছে। একটু দেখতে, মনের দু’টো কথা বলাতেই যেন শত শত মাইল দুর থেকে ছুটে আসা। কারণ একটু দেখতে, মনের দু’টো কথা বলতেই যেন ছুটে আসা। মা মেয়েকে, বাবা ছেলেকে বা কেউ অন্য কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটু আত্ম তৃপ্তি পাবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সীমানা বিভক্তকারি ভৌগলিক এলাকা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা নব-বর্ষ বৈশাখ উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএফ’র বাধা উপেক্ষা করে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে আবেগের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাণীশংকৈল জগদল সীমান্তের ৩৭৪, ধর্মগড়ের ৩৭৩, হরিপুরের ৩৭২, ডাবরি ৩৬৯ পিলার সংলগ্ন নোম্যান্স ল্যান্ডের নাগর নদীর পারে দুই বাংলার মিলন মেলা নজর কেড়েছে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঁটাতারের বেড়া দুই পাশে দাঁড়িয়ে দুই দেশের কান্না জড়িত কন্ঠে মা-মেয়ে, আত্মীয় স্বজন, জামাই-শ্বাশুড়ি অনেকেই। চোখে অশ্রæধারা মনে হচ্ছিল মাকে একটু ছুয়ে দেখি কিন্তু তা আর হয়না। ভৌগলিক সীমারেখায় দাঁড়িয়ে থাকা কাঁটাতার পাশানের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের কাছে উভয় দেশের মানুষ তাদের স্বজনদের এক পলক দেখার জন্য দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন। উভয় দেশের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে মুঠো ফোনের মাধ্যমেই আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে নেন দুই দেশে বসবাসকারি আত্মীয় স্বজনরা।
পাশপোর্ট করতে না পারা বা অভাবের তাড়নায় যারা বাংলাদেশ থেকে ভারত কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশ আসতে পারে না তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। নোম্যান্স ল্যান্ডে হাজির হয়ে কথা বলেন, উপহার সামগ্রী আদান প্রদান করেন।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একমত হয়ে সীমান্তের জিরো ভৌগলিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে দুই েেশর মানুষের কথা বলাবলি চোখে দেখা হয়। যে যেভাবে পারেন কথা সেরে নিতে থাকেন। প্রচন্ড রোদ্রতাপকে উপেক্ষা করেই দেখা করে মানুষ। দেখা কথা বলার মাঝেই উভয় দেশের আত্মীয় স্বজনদের জন্য উপহারটি কাঁটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে চালিয়ে দেন। অনেক সময় দুস্কৃতি প্রকৃতির লোকেরা এসব উপহার নিয়ে পালিয়ে যায়।
বগুড়া থেকে আসা সীতা রাণী বলেন, আমি আমার মেয়েকে দেখতে এসেছি। মেয়ে ভারতের পানি পথে থাকে। দুপুর হয়ে গেল এখনও মেয়ের সাথে দেখা হয়নি। মানুষের ভিড়ে দেখা হচ্ছে না তবে তারা এসেছে দেখা হবে।
নাটোরের গৌতম জানান, তার খালার সাথে দেখা করতে এসেছেন। ১৫ বছর থেকে খালাকে দেখেননি বলে তিনি কিছু উপহার নিয়ে এসেছিলেন। খালার সাথে কথা বলার পর উপহারগুলো দিয়েছেন।
দিনাজপুরের আনসার আলী জানান, ভারতে থাকা ১৫-২০ জন আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করে কথা বলেছেন অনেকদিন পর।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, বিজিবি-বিএসএফের উদ্যোগে মিলন মেলায় দুই দেশের মানুষ দেখা করার, কথা বলার সুযোগ পায় এটা প্রশংসনিয়। তাছাড়া এটি সাময়িকভাবে বেদনা দায়ক হলেও অনেক আনন্দের। দুই দেশের মিলন মেলা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা কামনা করছি।